ইমাম খাইর, সিবিএন:
আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকালে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দেবেন।
‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে ইনানী পাটোয়ারটেক সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে সাগরের জলরাশির ওপর দীর্ঘ একটি সেতু তৈরি হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর সকালে সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং তিনদিনের নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ আমন্ত্রিত ৪১টি দেশের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরকে নানা দৃষ্টিকোণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জোরেশোরে চলছে প্রচারণা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে তৃণমূলকে নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। সমাবেশে লোক সমাগম বাড়াতে কড়া বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। ইতোমধ্যে দলের কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম কক্সবাজারে পৌঁছে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। দিয়ে যাচ্ছেন দিকনির্দেশনা।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যাপক প্রস্ততি নিয়েছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফরকে কেন্দ্র করে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছি, সেটা বাস্তবায়ন করব। তাতে পুলিশ দৃঢ প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, ‘অপ্রীতিকর কিছু হবে না, আমরা আশাবাদি। অনুষ্ঠান সফল করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে কক্সবাজার। এতে পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করবে।’
কক্সবাজারবাসীর সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে মনে করেন এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাভিত্তিক প্রচারণ চলছে। অনুষ্ঠানস্থ থেকে শুরু করে পুরো শহর সজ্জিত করা হচ্ছে। নিরলস কাজ করছে দলীয় নেতাকর্মীরা। নেত্রীর আগমন ঘিরে সবাই উজ্জীবিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরকে ঘিরে পুরো শহর সাজানো হচ্ছে নানা আঙ্গিকে। তাকে স্বাগত জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড-পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক। সৈকত সড়কে বসানো হয়েছে বড় বিলর্বোড। ভাঙাচোরা সড়কের সংস্কার, ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সড়কে লাইটিং ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে সমানতালে। প্রধান সড়কের অসম্পূর্ণ কাজও দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।
বিমানবন্দর থেকে শহরের কলাতলীর হাঙর ভাস্কর্য মোড় পর্যন্ত পাঁচ-ছয় কিলোমিটার সড়কে তোরণ নির্মাণের ধুম পড়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক তোরণ তৈরি হয়েছে। শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ভেতরে জনসভায় বিশাল মঞ্চ তৈরির কাজও চলছে। জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর সফর নিরাপদ করতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শহর ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কলাতলী সৈকত সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ব্যানার-বিলবোর্ড টাঙিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার জেলা পরিষদ, হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতি, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ার মতো।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০১৭ সালের ২২ সেপ্টেম্বর উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে এসে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দলীয় জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তখন কক্সবাজারের উন্নয়নে যেসব প্রতিশ্রুতি (উন্নয়ন প্রকল্প) ঘোষণা দিয়েছিলেন, এখন তার সব কটি দৃশ্যমান। সরকারের এই মহাউন্নয়ন এবারের নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে।
ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ৭ ডিসেম্বরের দলীয় জনসভা থেকে কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন কিছু ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কক্সবাজারকে যা দিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের শুরুতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ।
টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে।
কক্সবাজারের মানুষ না চাইতেই অনেক কিছু দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে মুখিয়ে আছে সমুদ্র নগরের বাসিন্দারা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।